জনপ্রিয় ছোটগল্প। দেশ নিয়ে লেখা ছোটগল্প। ছোটগল্প। দেশের টানে। হুমায়ুন আহমেদের ছোটগল্প। Abm wayes kurani
দেশের টানে
লেখকঃ এবিএম ওয়ায়েছ কুরনী
আমার জীবনের অর্ধেক সময় যাকে ঘিরে, যাকে নিয়ে চিন্তায় চিন্তায় কেটেছে।আজ আমার সেই প্রিয়জনের কাছে যাচ্ছি। যার কাছে থাকলে নিজের জীবনের সমস্ত দূঃখ ভূলে যেতাম,ভূলে যেতাম সমস্ত বেদনা।
চাকরির সুবাদে বাসাটা পরিবর্তন করায় অনেকদিন পর, আজ আবিরের বাবার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। আমার ছেলে আবির আজ দেশের প্রথম সারির একজন কর্মকর্তা হিসাবে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করলো।খবরটা আবিরের বাবাকে না দিলে, আমি যেন কোনোমতেই শান্তি পাচ্ছি না।
এখনো যেন পিছনের দিনগুলো আমার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভাসছে।আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে আমাদের ছিল দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী আর আমার গর্ভে অনাগত পাঁচ মাসের সন্তান। হঠাৎ এলো মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা,দেশ আর দেশের মানুষকে মুক্ত করতে এলো মুক্তিযুদ্ধের ডাক।অফিসের পিয়ন চিঠি দিয়ে গেল। চিঠি পড়ে যা বুঝতে পারলাম,আমার আবিরের বাবা অফিস থেকে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। দেশের টানে দেশের সর্বশ্রেণীর মানুষ আজ একাত্বতা পোষণ করেছে।আবিরের বাবার মতো এখন সব মানুষেরা এই দেশ আর দেশের মানুষের মুক্তি চায়।
অনেকে শুনে আমাকে নিষ্ঠুর বলতে পারে কিন্তু জানেন, সেদিন আমি এক ফোঁটাও কান্না করি নি।আবিরের বাবার জন্য আমার গর্ব হয়েছিল।সত্য বলতে একজন সাহসী বীরপুরুষকে আমি কাপুরুষের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে, পরাধীন মেনে নিয়ে, নিজের জীবন বাঁচানোকে কখনোই মেনে নিতে পারতাম না।সেটা যেন আবিরের বাবার ব্যাক্তিত্বের বড়ই অসম্মান হতো। আমি নিজেকে শক্ত রেখে একজন মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিণী হিসাবে আবিরের বাবাকে সমর্থন করেছিলাম।
কবরটা আগাছায় ভরে উঠেছে, এক সময়ের সাহসী মুক্তিযোদ্ধা আজ নিরবে আগাছাগুলোকে বরণ করে নিয়েছে। আজ আবিরের বাবা চিরশান্তির নিদ্রায় ঘুমিয়ে আছে।তবে এই দেশ আর দেশের মানুষের মুক্তির জন্য দেশের টানে আবিরের বাবার মতো যে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধারা নিজের বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল, সকল মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই বিনম্রশ্রদ্ধা।স্বামীহারা একজন বিধবা মা হিসাবে আমি চাই আমাদের সন্তানেরা যেন তাদের অবদান ভুলে না যায়।
দেশের টানে
লেখাঃ এবিএম ওয়ায়েছ কুরনী
০৮-০৮-২০২২
#abmwayeskurani
জনপ্রিয় ছোটগল্প
দেশের ছোটগল্প
দেশাত্মবোধক ছোটগল্প
কোন মন্তব্য নেই