হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয় গল্প।bangla golpo।বাংলা উপন্যাস
বাংলা জনপ্রিয় গল্প।bangla golpo। বাংলা উপন্যাস
জনপ্রিয় গল্পসমগ্র। এবিএম ওয়ায়েছ কুরনীর সেরাগল্প
জনপ্রিয় অনুগল্প।বাংলা সেরা উপন্যাস
সেরা দুঃখের গল্প। জনপ্রিয় গল্পের সমাহার
কাব্য_গল্প
রুনাদের_ভাগ্যে_সংসার_হয়_না
2013 সনে আমি এই গল্পটি খুব অল্প সময়ে লিখেছিলাম।বয়সের সাথে সাথে আমার লেখার মান ধীরে ধীরে কতটা মানসম্পন্ন হচ্ছে, সেটা অনুধাবন করবার জন্য কখনো এডিট করা হয় নি।যেন অনেক বছর পরে বুঝতে পারি,আমার বাচ্চা বয়সের লেখার মান কেমন ছিলো।আমার বাচ্চা বয়সের লেখা কাব্য-গল্প "রুনাদের ভাগ্যে সংসার হয় না" প্রিয় মানুষগুলোর জন্য পুনরায় পোস্ট দেওয়া হলো।
#রুনাদের ভাগ্যে সংসার হয় না
লেখক: এ.বি.এম. ওয়ায়েছ কুরনী
আমি রবিন কেমিস্ট্রি বিভাগ থেকে মাস্টার'স শেষ করলাম ।আমার Image of love রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ২য় বর্ষের যশোর সরকারি মাইকেল মধূসুধন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী। আজ আমাদের প্রথম এ্যানিভার্সারি ।আমার প্রাণভোমরা রুনার অপেক্ষায় বসে আছি ও থাকে খুলনাতে।পৃথিবীতে সব থেকে বড়কষ্ট যেন অপেক্ষাতে, অপেক্ষার প্রহর যেন ঘুড়ির সুতার মতো শেষই হতে চায় না।
রুনার সাথে আমার প্রথম পরিচয়টা হয়েছিলো এক চলন্ত বাসের ভিতর।বলতে পারেন ও আমার লেখার অনেক বড় একজন ভক্ত ।আমাকে দেখে ঠিক চিনে ফেলে তারপর ধীরে ধীরে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্যাম্পাসে আমাদের প্রণয়।
হঠাৎ আমার সামনে রিক্সা এসে থামলো,অপেক্ষার দড়ি টানতে টানতে অবশেষে রুনা চলে এসেছে ।লেখকমশাই উঠেন বলেই রিক্সার হুক খুললো,আজকে রুনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে।যেন সারাদিন রিমঝিম বৃষ্টিস্নাত দিনের শেষের গোধূলিলগ্ন।
রুনু দেখতে বেশি সাদা ফর্সা না হলেও শ্যামলা মায়াবি মিষ্টি চেহারা ।ওর চেহারাতে যেন একটা মায়া আছে ,বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে নেশা ধরে যায়।তার শারিরীক গঠণ বা ফিগার যাই বলেন না কেন ,যে কোন পুরুষ দেখলে প্রেমে পড়তে বাধ্য।এটা তার সৌন্দর্যকে আরো বেশি বাড়িয়ে তুলেছে ।
আমি বললাম রুনু আজ আমরা সারাদিন রিক্সাতে ঘুরবো,ওকে এখন তুমি কবিতা শোনাবে আর আমি তোমার কাঁধে মাথা রেখে এই শহরটা দেখবো।সুবাসিনী কে খুশি করতেই আমি কবিতা শুরু করলাম.......
কবিতা: অবুঝ মন
লেখা: এ.বি.এম. ওয়ায়েছ কুরনী
...... ভালোবেসে ভালোবাসায়
নিজেকে জড়াতে কে না চায়,
নবীন-প্রবীণ সবাই সমান অধিকার
এখানে তাই পায়।
ভালোবাসা মানেটা তাই জানার উপায় নাই।
প্রজাপতির শতরঙা রঙীন স্নিগ্ধ ডানায়
বেলীফুলের সাদারঙের মেলায়।
শরতের কাশফুলের মত মৃদু বাতাসে দোলায়।
টিপ টিপ বৃষ্টিতে মনের মানুষ কাছে থাকলে
আবেগ আপ্লুত কন্ঠে,
মনটা মুখ থেকে কিছু বলায়....
.........
রুনু খুলনাতে একটি হোটেলে রিসিপশনিষ্ট হিসাবে ছোটখাটো একটা জব করে। বেশ কয়েকবছর হলো ওর মা-বাবা দুইজনই এক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন । এই পৃথিবীতে রুনুর ছোটভাই রাজিব যে ক্লাস সিক্সে পড়ে আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই ওর।
তার একমাত্র আপন খালা তারাও সম্পর্ক ছেদ করেছে স্বার্থেরটানে। অবশ্য আমি রুনুর অনেক কিছুই এখনও ভালোভাবে জানতে পারিনি।তবে রুনু যে আমাকে খুব ভালোবাসে এটা আমি বুঝি।আমার কথা না হয়, না ই বললাম। আমি যেন তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
আমি একটা ভালো জবের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি ।চাকুরীর ব্যবস্থা হলেই আমরা বিয়েটা সেরে ফেলবো।রুনুকে আমার করে নিবো।
রুনুর সাথে কথা বলে সবেমাত্র ফোনটা রেখেছি, এমন সময় আমার ডিজে বন্ধু রুমেল আসলো খুলনা থেকে।রুমেল ঢাকা কলেজে পড়তো,এখন ঢাকাতেই থাকে।ঢাকা থেকে মাঝে মাঝে ও খুলনাতে যায় প্রেমিকার সাথে দেখা করতে, ঢাকা ফেরত যাবার সময় আমার সাথে দেখা করে যায়।
রুমেলের মেয়ে দেখলেই ছুকছুকানি স্বভাবটা অনেক পুরানো, সেই মাধ্যমিক থেকে। এখন সেটার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে, খুলনাতে বাজে মেয়েদের সাথে তার অবাধ মেলামেশা।
রুমেল ফ্রেশ হয়ে এসে গল্প বলা শুরু করলো।আরে yrr আজকে যে জিনিস খেয়েছি, আমি জীবনে এমন জিনিস খাইনি। খুব ইনজয় করেছি,কাজশেষে ৫০০ টাকা বকশিষ দিয়েছি।
আমি বললাম তোর কাছে আবার ভালোমন্দ।এটা কত নং রে ১০৭?
রুমেল: দোস্ত ,জানি তুই বিশ্বাস করবি না, এজন্য হাইড ক্যামেরাটা দিয়ে ভিডিও করে এনেছি,সময় থাকলে আরো দুইদিন খুলনাতে থেকে যেতাম।
আমিঃ- ওরে বাবা তাই,এরকম ব্যাপার।ভাগ্যিস সাথে করে নিয়ে চলে আসিস নি।
রুমেলঃ ভিডিওটা একবার দেখ ,রুমেলের চোখ যেন চক চক করে উঠলো
আমিঃ-তুই জানিস না ঐগুলো আমি দেখিনা।
রুমেল: তোকে পুরো ভিডিও দেখতে হবে না,শুধু একবার মেয়েটাকে দেখ ।দেখ না মামা!
রুমেল আমার অনিচ্ছা সত্বে জোর করে ধরে আমার চোখের সামনে ভিডিও ওপেন করলো,ভিডিও প্লে করতেই একি?
আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো,কানে যেন শুনতে পাচ্ছি না, চারিদিকে অন্ধকার দেখছি কেন?এত গরম কেন লাগছে? পুরো শরীরটা ঘেমে গেছে আর হাত পা অস্বাভাবিক কাঁপছে,আমি বিছানাতে গা টা এলিয়ে দিলাম।রুমেলকে ইশারা করলাম,আমাকে পানি পান করা গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ রেস্ট নেবার পর এখন অনেকটা ভালোলাগছে ও দিকে রুমেল খুব আগ্রহের সাথে ভিডিও দেখেই যাচ্ছে।
রুমেল: বললাম না দোস্ত,যে কেউ দেখলে তমার স্বাদ নিতে চাইবে।তমাকে যে আমার এত ভালো লাগছে ,তোকে বলে বোঝাতে পারবো না yrr.
রুমেল যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।তার আনন্দের অন্ত নেই। অনেক মেয়েদের সাথে মেলামেশা করেছে রুমেল, যে মেয়ে গুলোকে পছন্দ হয়েছে তাদের গল্প করেছে আমার সাথে But রুমেলকে এতটা খুশি হতে আমি কখনও দেখিনি। এ দিকে আমার ভিতরটা দাবানলের মতো পুড়ছে কিন্তু আমি রুমেলকে বুঝতে দিচ্ছি না।এ যে কত যন্ত্রনা তা বোঝানো যাবে না।
আমি : এই মেয়েটির নাম তমা? তুই নিশ্চিত জানিস?
রুমেল: yeah dost. আমি শিওর জানি ,ওর নাম তমা চৌধুরী।
আমি: মেয়েটা কে কোথায় পাওয়া যাবে.? প্রসেসিংটা বল।
রুমেল: বললাম না মামা,যে দেখবে সে প্রেমে পড়ে যাবে।শেষ পর্যন্ত তুই ও যেতে চাচ্ছিস,হা হা হা।কি রে তুই এখনই যাবি নাকি?
হুম প্রসেসিংটা বল।
রুমেলঃ ব্রু হান্টার হোটেলে গিয়ে খোজ নিবি বল্টু ম্যানেজার কে। বল্টু ম্যানেজারের কাছে তমার কথা বললেই হবে ।শোন আর একটা বিষয়,তমা কিন্তু আশেপাশের কোন কাস্টমার গ্রহন করে না, দুরের ছাড়া ।বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করলে বলবি ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম।
আমি: ঠিক আছে ,(শুনছি আর আমার ব্যাগ রেডি করছি,) আমি এখনই যেতে চাই রুমেল, তুই কি থাকবি না ঢাকায় রওনা দিবি?
রুমেল: মামা শেষ পর্যন্ত ধরা খেলি তাহলে।আমিও রওনা দিবো তবে just 5 minute yrrr.... washroom থেকে আসছি,
আমি :ওকে দ্রুত আয়,
রুমেল ওয়াশরুমে ঢুকতেই ভিডিওটা আমার ফোনে নিয়ে নিলাম, আর রুমেলের ফোন থেকে চিরতরে বিদায় করে দিলাম।
রওনা দিলাম রুমেলের সেই রাতের রজনীগন্ধা তমার উদ্দেশ্যে ।খুব সহজেই বল্টু ম্যানেজারের দেখা পেলাম ,বল্টু ম্যানেজার দুই হাজার টাকার বিনিময়ে 65 নং রুমে আমাকে দিয়ে গেলেন, তবে বল্টু সাহেব আমাকে সতর্ক করলেন ,তার ভাষায়: ভাই সময় কিন্তু এউক ঘুন্টা ।এউক ঘুন্টার বেশি হইলে আবার বারতি টাহা দেওন লাগবো,
তমা ম্যাডাম ২০ মেনেট পরে আইবো।
আমি মুখটা খুব ভালো করে জড়িয়ে রাখলাম, সামনের গ্লাসে নিজেকে নিজেই চিনতে পারছি না। আমি এই প্রথম কোন হোটেল রুমে, কারো জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি।বিশ মিনিট বললো বল্টু সাহেব কিন্তু আমার কাছে বিশ হাজার
মিনিট মনে হচ্ছে, অপেক্ষার দড়ি টানতে টানতে অবশেষে কলিংবেল বাজলো, দরজা খুলতেই এ কী? রুমেলের তমা নয়, আমার রুনু ভিতরে প্রবেশ করলো, পরনে হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের মত বেশ আবেদনময়ী পোশাক।
আমি দরজা নক করে পিছনে ঘুরতেই দেখি, রুনু নিজেকে আমার কাছে সপেঁ দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রুনু আমাকে ইশারা করলো অন্যদের মত তার রাজ্যে ঝাঁপ দিয়ে, সমস্ত রাজ্য ঘুরে দেখবার।অন্যদের মতো খুশি হবার পরিবর্তে আজ আমার বুকের পাশটাতে কেমন যেন চিনচিনিয়ে ব্যাথা করছে।
আমি কোন কথা না বলে শুধু আমার মুখের বাধনটা খুলে দিলাম, আর তাতে আমার রুনু ঝাপ মেরে দুরে সরে গেল ।রুনু আমাকে, এখানে এই অবস্থাতে কখনও আশা করে নি সেটা আমিও জানি। তার সমস্ত আশা-ভরসা আজ ধুলায় মিশে গেল। প্রবাদে আছে চোরের দশদিন আর গেরস্থের ......
আমি:কেন এমনটা করলে তুমি আমার সাথে ছি: ছি : আমার ঘৃণা লাগছে তোমার দিকে তাকাতে। বলে ব্যাগটা নিয়ে উঠতে যাবো, রুনু আমার পায়ে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
রুনু: আমাকে ৫ টা মিনিট সময় দাও ,শুধু ৫ টা মিনিট আমার কথা শোন,প্লিজ। যে রুনুর চোখের পানি দেখলে আমার চোখে পানি জমতো,সেই রুনু আজ প্রচন্ড কাঁদছে আর বলছে কিন্তুু আজ রুনুর দিকে ফিরে তাকানোর ইচ্ছা ও আমার নেই। নেই কোন মায়া ।
বাবা-মা মারা যাবার পর যখন চাচাতো চাচারা সব সম্পত্তি জোর করে দখল করে নিয়ে নেয় ,ছোট্ট ভাইকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম, কেউ পাশে এসে দাড়ায় নি।আমার খালু ছিলো চরম খারাপ মানুষ তবুও তখন নিরুপায় হয়ে খালুর বাসায় উঠতে হয়।
খালু আমাকে একদিন বাসায় একা পেয়ে ধর্ষণ করে। খালার সাথে বলেছিলাম,প্রতিবাদ করেছিলাম।খালা আমাকে উল্টা অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিল। কোন চাকরি ম্যানেজ করতে না পেরে একটা হোটেলে কাজ নিই।
হোটেল থেকে বাড়ি ফিরতে আমার প্রায়ই রাত হয়ে যেত, হোটেল মালিককে বললে বলতো কাজ করলে কর না করলে ভাগ। অপরিচিত বলে আমাকে কেউ কাজ দিতে চাইতো না, তাই আর কিছু বলা হয়নি।একপ্রকার বাধ্য হয়ে কাজটা করছিলাম। একদিন তোমাদের এই ভদ্র সমাজের 11 জন শিক্ষিত কুকুরেরা আমার রাস্তা আটকায়।
(আমি এবার অবাক হয়ে রুনুর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে শুনছি, আর ও মুখটা নিচু করে কেঁদে কেঁদে বলে চলেছে, এবার ঘৃনার পরিবর্তে ওর প্রতি কেমন যেন মায়া লাগছে। )
আমাকে মুখবেধে এক খালের পাড়ে একের পর এক নির্যাতন করতে থাকে মানুষরুপী জানোয়ারেরা , ওরা প্রথম তিনজন আসার পরে আমার সমস্ত শরীর অবাশ হয়ে গেছিলো। আমাকে যে জায়গাটাতে হায়েনারা রেখেছিল, ওখানে নিচে ইটের ছোট ছোট ধারালো খোয়া রাখাছিল। প্রতিটা ঝাকুনিতে লোহার গরম শিকের মত ফুটছিল আমার শরীরে।আমার পুরো শরীর রক্তাত্ত হয়ে যায়,ব্যাথায় গোঙাতে থাকি।জানো তবুও আমাকে ছাড়েনি ওরা।
বলতে বলতে হাউমাউ করে জোরে কেঁদে উঠলো রুনু, আমি রুমালটা এগিয়ে দিলাম।আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। সান্তনা দেবার কোন ভাষা আজ আমার জানা নেই
রুনু: আমি ৫ম জানোয়ার আসার সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম, এক সময় জ্ঞান ফিরে আসে। ভেবেছিলাম কেউ মুখে পানি ছিঁটিয়ে দিয়েছে তাই জ্ঞান ফিরে পেয়েছি কিন্তু না পরক্ষণে মুখে লবনাক্ততা অনুভব করলাম। বুঝতে আর বাকি রইলো না,কুকুরেরা তাদের সমস্ত পশুত্ব আচরন দেখিয়ে দিয়েছিল।আমার মুখে প্রসাব করতে ও বাকি রাখলো না কুকুরেরা । তারপর আরো তিনজন।
আমি আর বসে থাকতে পারলাম না, দেয়ালে পিঠটা লাগিয়ে দিলাম।
রুনু:কেনো গতবছর পত্রিকার শিরোনাম দেখোনি বুঝি?। না মনে নেই ১১ যুবকের দ্বারা তরুনী ধর্ষিত।
আমি আর কোন কথাই বলতে পারলাম না।
রুনু: তারপর সরকারিভাবে চিকিৎসা হবার পর এই পেশায় নেমেছি। তোমাকে নিয়ে সংসার সাজাতে চেয়েছিলাম তাই তোমাকে কোনদিন কিছু বুঝতে দিইনি। তবে আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি লেখক সাহেব। যতদিন বাঁচবো আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো,আমি জানি আজকের পর হয়তো তুমি আর কখনো আমার মুখ দেখতে চাইবে না।
আমি একজন শিক্ষিকা হতে চেয়েছিলাম লেখক সাহেব কিন্তু এই সমাজ আর নিয়তি আমাকে উল্টো পথে ঠেলে দিলো।ইচ্ছা করে কেউ তমা হতে চায় না লেখক সাহেব।ইচ্ছে করে কেউ তমা হতে চায় না।তবুও যদি কখনও এই অভাগির প্রয়োজন হয় আমাকে ডেকো,কাঙালিনীর মতো ছুটে চলে যাবো তোমার কাছে।
আমি কোন কথা না বলে স্বার্থপরের মতো সোজা বাসার দিকে রওনা দিলাম, একবার ফিরে ও তাকায় নি রুনুর দিকে।কেন ফিরে দেখবো? ও তো পতাতা। এবার আমার চোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরছে। রুনুকে আমি ভালোবাসি ,তবে লোকলজ্জার ভয়ে এই শিক্ষিত মাকালফল সমাজে আমি রুনুকে গ্রহন করতে পারবো না ।পারবো না আমি গ্রহন করতে।
আজকে যেন নিজেকে অনেক স্বার্থপর মনে হচ্ছে।নিজেকেই আজ নিজে যেন চিনতে পারছি না,বড্ড বেশি অপরিচিত মনে হচ্ছে নিজেকে। বাসে জানালার পাশে বসে অনেক চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মাথাটা আজ ধরেছে,কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে।
অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম রুনুকে আমার করে নিবো, সমাজ যা বলে বলুক।আমাকে এখনি রুনুর কাছে ফিরতে হবে, বাসের সিট থেকে ওঠার সময় রুমেলের ভিডিওটার কথা মনে পড়লো।মনে পড়তেই রুমেলের ভিডিওটা প্লে করলাম,প্লে করেই দেখি রুমেল তার ভালোবাসার বন্ধনে রুনুকে জড়িয়ে রেখেছে।রুনু ও তাতে সমান তালে তাল দিয়ে যাচ্ছে।
এই দৃশ্যটা দেখার পর রুনু নামটা আবার ভুলে যেতে মন চাইছে। কোন প্রিয়তমার এমন দৃশ্য দেখে পৃথিবীর কোন পুরুষ তার প্রিয়তমাকে গ্রহণ করবে কি না জানি না, তবে অন্তত আমি আর পারবো না।
রুনু আমার বুকে তোমাকে জায়গা দিতে পারলাম না, তুমি না হয় শত শত যুবকের তমা হয়েই থেকো। আমি আমার বুকে চিরজীবন রুনুকে ধারণ করেই বেঁচে থাকবো।আমাকে ক্ষমা করে দিও।
2 মাস পর ফোনে একটা এসএমএস আসলো Sms না কবিতা রুনুর নাম্বার থেকে ,আমি পড়া শুরু করলাম।
কবিতাঃ'' তরুণীর প্রতীক্ষা '''''
কবি: এ.বি.এম ওয়ায়েছ কুরনী
এই পড়ন্ত বিকাল হয়েছে রঙিন
তুমি আসবে বলে ।
বাতাসে বাতাসে করিতেসে ফিসফিস
তুমি আমায় ডাকবে বলে ।
তোমারই অপেক্ষায়, বসে আছি নিরালায়।
চুপি - চুপি একা - একা ।
ছোট্ট একটি আশায়
এখনই যে পাবো তোমারই দেখা ।
ঠোঁট জোড়া দুটি ভিজিয়ে নিয়েছি,
তোমারই সাথে কথা বলব বলে।
বুকের উষ্ণ কাপড় বিছিয়ে রেখেছি,
তুমি বসবে বলে ।
মেঘের পরশ ঘেরা কেশ এলিয়ে রেখেছি
তুমি খোঁপা বেঁধে দিবে বলে ।
বেলিফুলের মালা পরেছি গলে
তুমি ঘ্রাণ নিবে বলে ।
ঘুরন্ত চঞ্চলা মন শান্ত করেছি
তোমারই কাছে সঁপে দিব বলে ।
কখন আসবে তুমি ?
এখনো কি হয়নি তোমার আসার আকুলতা !
নাকি অনুভবে বোঝনি !
এই ঘুরন্ত তরুণীর স্নেহ ব্যাকুলতা ।
আসি আসি করে
গোধূলিলগ্ন যে গেল চলে
সন্ধ্যার ছায়া পড়েছে যেন
পুকুরের ঘোলা জলে ।
চাতক যেমন চেয়ে থাকে
এক ফোঁটা বৃষ্টির অপেক্ষায় ।
তেমনি রহিবো আমি হাজার বছর ধরে
তোমারই আসার প্রতীক্ষায় ।।
চিঠি পড়ার পর,আমি মনে মনে বলতে লাগলাম।Sorry রুনু।এই সমাজের বুকে আমি বড় অসহায়।আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। তোমার
এই প্রতীক্ষা কোনদিন শেষ হবে না রুনু,ভালো থেকো তুমি। ভালো থেকো,নিজের অজান্তেই চোখের কোণে পানি চলে এলো।
অবশেষে মোবাইল থেকে সিমটা খুলে ভেঙ্গে ফেলে দিলাম।
দুই বছর পর
.....আমার নতুন একটা চাকুরি হয়েছে,বাসা ছেড়ে দিবো আগামিকাল।আগামি মাসে সাদিয়ার সাথে আমার বিয়ে। আজ একজন চিঠি নিয়ে এসেছে আমার কাছে সাথে নীল রেশমি চুড়ি।
লোকটি বললো:চিঠিটি পড়া শেষ হইলে বাইরে যাইয়েন,বাইরে কেউ আপনের জন্য অপেক্ষা করতেছে।আমার স্মৃতিপটে অাঘাত পড়লো এমন চুড়ি যে আমি আমার রুনুকে দিয়েছিলাম, চিঠিটির প্রেরক বল্টু ম্যানেজার।ভয়ে ভয়ে আমি খামটা খুললাম,একটি চিঠি।
চিঠিটা খুলতেই ,
আমার লেখক সাহেব ,কেমন আছো তুমি?আশা করি তুমি অনেক ভালো আছো।
যখন তুমি চিঠিটি পাবে,আমি তার এক সপ্তাহ আগেই না ফেরার দেশে চলে গিয়েছি। আমার ছোট ভাইটাকে রেখে গেলাম তোমার কাছে ও আমার সম্পর্কে কিছুই জানে না।আমি সবার কাছে যত খারাপ ই হই না কেনো,আমার ভাইয়ের কাছে এক পবিত্র বড় বোন ।তুমি ওকে অমানুষ হতে দিও না,আমি ওকে তোমার কাছে পাঠিয়ে দিলাম।তোমাকে শেষবারের মত খুব দেখতে ইচ্ছা করছিলো কিন্তু নিজের মনকে এই বলে সান্তনা দিলাম যে,রুনাদের শেষ ইচ্ছা বলে কিছু থাকতে নেই।
তোমার ভালোবাসার কাঙালিনী
রুনু।
আমি দৌড়ে বাইরে যেয়ে দেখি, বল্টু ম্যানেজার আর রুনুর ছোট ভাই রাজিব।আমি কাছে যেতেই রাজিব আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।
আর বলছে:আমি সব সময় দেখতাম আপু তোমার ছবি ধরে কাঁদতো,একা একা তোমার সাথে কথা বলতো।সারাদিন অন্ধকার রুমে বসে থাকতো।
বল্টু ম্যানেজার বললো রুনা আমাকে ভাইয়ের মত জানতো,আপনি চলে আসার পর থেকে রুনা তার চাকরি মানে সমস্ত কাজ ছেড়ে দেয়।ওর ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছিল প্রথমিক পর্যায়ে।ডাক্তার বলেছিল চিকিৎসা করলে সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে,কিন্তু রুনা বলেছিল কার জন্য বাঁচবো? এই কলন্কময় জীবন নিয়ে আর বাঁচতে চাই না। বল্টু ভাই রাজিব কে তুমি রবিনের কাছে পাঠিয়ে দিয়ো আমার মৃত্যুর পরে।।
কেন জানিনা,নিজের অজান্তেই রাজিব কে জড়িয়ে ধরে কচি বাচ্চাদের মতো করে রুনু রুনু বলে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম।সেই কান্নার আওয়াজ চারিদিকে বাধা পেয়ে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এসে যেন আমাকে ধিক্কার জানাতে লাগলো।
কোন মন্তব্য নেই